Type Here to Get Search Results !

শেরপুরে লাইসেন্সবিহীন সিএনজি অটোরিকশা চালকের ছড়াছড়ি

শেরপুরে লাইসেন্সবিহীন সিএনজি অটোরিকশা চালকের ছড়াছড়ি

শেরপুর প্রতিনিধি

ঘুষ না দিলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নানাভাবে হয়রানি হতে হয়। যেহেতু টোকেন দিয়েই সিএনজি অটোরিকশা চালানো যায় তাই আর লাইসেন্স করার প্রয়োজন পড়ে না। এ কারণে শেরপুরে দিন দিন বাড়ছে লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা চালকের সংখ্যা। কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর শহরের খোয়ারপাড় এলাকার সিএনজি অটোরিকশা চালক কবির হোসেন। 

জানা গেছে, শুধু কবির নয় তার মতো আরও অনেকেই লাইসেন্স করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এখন জীবিকার তাগিদে অটোরিকশা মালিক সমিতির নেতাদের কাছে মাসিক নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিয়ে জেলাজুড়ে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকরা। 

শেরপুর অটোরিকশাচালক সংগঠনের একটি সূত্র জানায়, সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীতে অন্তত চার হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এরমধ্যে নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ৭৪৩টির। আর এর বেশির ভাগ চালকেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। আর যাদের আছে সেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে।   আটোরিকশাচালক আহমদ মিয়া বলেন, বছরজুড়ে লাইসেন্স ছাড়া চলাচল করলেও তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। কারণ প্রতিমাসে মালিক সমিতিতে ১৫০ টাকা চাঁদা পরিশোধ করার একটি টোকেনেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। 

শরিফুল ইসলাম নামে এক চালক বলেন, অটোরিকশার নিবন্ধন থাকলেও জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতি মাসে একধিক জায়গায় নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিতে হয়। তাহলে অটোরিকশার নিবন্ধন করার দরকার কি?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি সোবহান হাজীর টোকেন দিয়ে পুরো জেলায় নির্বিঘ্নে গাড়ি চালানো যায়। মাত্র ১৫০ টাকা খরচ করলে আর কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না।

এক প্রশ্নের জবাবে আয়য়ুব মিয়া নামে একজন বলেন, লাইসেন্স দিয়ে কী করব। আমাদের ওইসব লাগে না। মালিক সমিতির কাগজ থাকলে চোখ বন্ধ করে রাস্তায় চলা যায়। পুলিশও আটকায় না। আরামে গাড়ি চালাই।

চালক একাব্বর মিয়া বলেন, বিআরটিএ অফিস থেকে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিকমতো পাওয়া যায় না। ওইসব করতে গেলে এই কাগজ দাও, সেই কাগজ দাও বলে মাসের পর মাস ঘুরায়। সব শেষে তারা আন্ডার টেবিল চায়।  অন্যদিকে কম খরচে এবং হয়রানিমুক্ত পরিবেশ থাকলে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রবিউল ইসলাম নামে এক চালক।   সোলায়মান নামে একজন বলেন, দেড়শ টাকা মান্থলি দেই, তারপরও পুলিশ মাঝেমধ্যে ঝামেলা করে। এজন্য কাগজপত্র থাকা দরকার। কিন্তু লাইসেন্সতো করতে পারি না।   অটোরিকশাচালক ইউনুস শেখ বলেন, যেসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তাদের পথে পথে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। চাঁদার টাকার বিশেষ স্টিকার গাড়িতে না লাগালে তাদের একাধিক স্পটে হয়রানির শিকার হতে হয়।

আলালউদ্দীন নামে এক চালক বলেন, প্রতিটি উপজেলায় ঢুকতে গেলে মাসিক টাকা দিতে হয়। এভাবে চলা তো খুব মুশকিল। আর বিআরটিএ অফিসে গেলে হরেক রকম ঝামেলা।

চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অটোরিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান বলেন, গরিব শ্রমিকদের মেয়ের বিয়ে দিতে বা কোনো চালক দুর্ঘটনায় আহত হলে তাদের জন্য টাকা খরচ করতে হয়। এ জন্য প্রতি গাড়ি থেকে টাকা তোলা হয়। তবে আমরা কোনো চাঁদা তুলি না। এটা আইনে নাই।

অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি সাবাহান আলী বলেন, কোনো চালক মারা গেলে তার নামাজে জানাজায় যে খরচটা হয় সেটা আমাদের তোলা টাকা থেকেই খরচ হয়। এছাড়া গঠনতন্ত্রে আছে মাসে ২০০ টাকা নেয়া যাবে। এরমধ্যে যারা টাকাটা উঠায় তারা ৫০ টাকা নিয়ে নিচ্ছে।

জেলা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ারুল কিবরিয়া বলেন, বেশির ভাগ অটোরিকশার নিবন্ধন নেই। আর যাদের আছে, সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ।

ঘুষ ছাড়া চালকরা লাইসেন্স পাচ্ছেন না এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, কোন ভুক্তভোগী এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেননি। তবে কেউ যদি এ নিয়ে অভিযোগ দেন তাহলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সম্পর্কে শেরপুরের পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম বলেন, নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালককে ধরতে আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছি, জরিমানার টাকাও আদায় করা হচ্ছে।

মোনালিসা বেগম আরও বলেন, সড়কে চলাচল করতে চালকের কোথাও থেকে টোকেন নেয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/267009/শেরপুরে-লাইসেন্সবিহীন-সিএনজি-অটোরিকশা-চালকের-ছড়াছড়ি

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.