Type Here to Get Search Results !

প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর বাসার লিফটে পরিচালককে মারধর, থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা

প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর বাসার লিফটে পরিচালককে মারধর, থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমানের বাসার লিফটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মলয় কুমার শূরকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার  এ ঘটনায় আরেক কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় মামলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক :: own-reporter

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমানের বাসার লিফটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মলয় কুমার শূরকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার  এ ঘটনায় আরেক কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় মামলা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাতে রাজধানীর পরীবাগ এলাকার দিগন্ত টাওয়ারে মন্ত্রীর বাসার লিফটে এ ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘হামলাকারী’ কর্মকর্তা অধিদপ্তরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লিভ, ডেপুটেশন অ্যান্ড ট্রেনিং রিজার্ভ) মো. আজিজুল ইসলামের নতুন পদায়ন বাতিল করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একসময় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন আজিজুল ইসলাম। এ প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটি গত ১ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় মামলা হলে তাকে প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। মামলা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আজিজুলের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজিজুলের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লিভ, ডেপুটেশন অ্যান্ড ট্রেনিং রিজার্ভ) পদটি পঞ্চম গ্রেডের জুনিয়র কর্মকর্তা পদমর্যাদার। দুটি বিভাগীয় মামলায় তার দুটি ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) কাটা গেলে আজিজুল এই পদে চলে যান। অন্যদিকে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদ ছিল পরিচালক পদমর্যাদার তৃতীয় গ্রেডের। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর বহিরাগত এক ব্যক্তিকে নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক এমদাদুল হক তালুকদারের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ রয়েছে আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তখন আজিজুল সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। ওই দিন মহাপরিচালক তৎকালীন পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষে যান। আজিজুল তখন তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মহাপরিচালককে চাপ দেন। 

তখন মহাপরিচালক আজিজুল ইসলামকে বলেন, এটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তখন তার সঙ্গে চেঁচামেচি করেন আজিজুল। পরে কক্ষ ত্যাগ করতে চাইলে মহাপরিচালকের পথরোধ করেন। একপর্যায়ে তাকে ধাক্কা দেন ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হয় আজিজুলকে। মহাপরিচালককে লাঞ্ছিত করার এ ঘটনার আগের বছর (২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর) প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অশোভন, অসৌজন্যমূলক ও বিদ্বেষপ্রসূত বার্তা আদান-প্রদান করার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায়ও দোষী সাব্যস্ত হলে গত ১২ মে তাকে বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হয়। একই সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হয়। 

আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে  এজাহারটি মামলায় রূপান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান। তবে আসামি আজিজুলকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসনিক বিষয়ে দিকনির্দেশনার জন্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রী তার বাসভবন দিগন্ত টাওয়ারে মলয় কুমারকে যেতে বলেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া আটটার সময় মন্ত্রীর বাসায় যান তিনি। কাজ শেষে সোয়া নয়টার দিকে টাওয়ারের লিফটে নিচতলায় নামেন। আজিজুল লিফটের সামনে আগে থেকেই ভারী কোনো বস্তু নিয়ে অবস্থান করছিলেন। লিফটের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে মলয় শূরকে ধাক্কা দিয়ে লিফটের ভেতর ফেলে দেন তিনি। হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা ও নাকে আঘাত করে জখম করেন। মলয় চিৎকার করলে নিরাপত্তা প্রহরীরা এগিয়ে আসেন। তখন ভয়ভীতি ও জীবননাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যান আজিজুল। এরপর মলয়কে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার মুখমণ্ডল ফেটে যাওয়ায় সেলাই দিতে হয়েছে ও স্থায়ী ক্ষত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়া বুক ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। 

মলয় কুমার বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে ফেরার পথে লিফট থেকে নামতে যাব, তখনই আজিজুল আমাকে অতর্কিত আক্রমণ করেন। হত্যার উদ্দেশে কোনো ভোঁতা বস্তু দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে আজিজুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা‌ হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।

হামলার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে মলয় শূর বলেন, আজিজুল ইসলামকে মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার পরিচালক পদমর্যাদার একটি পদে পদায়ন করে। যেহেতু তিনি (মলয়) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন), তাই এ বিষয়ে মন্ত্রীকে মতামত দিয়েছিলেন। বিভাগীয় মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত অবস্থায় আজিজুলের নতুন পদায়ন হয়। আইন অনুযায়ী তিনি কথা বলেছেন। এটা কারও পক্ষে যেতে পারে, বিপক্ষেও যেতে পারে। এ কারণে আজিজুল তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে মন্ত্রী আবদুর রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। অভিযোগ রয়েছে, ডা. আজিজকে মন্ত্রীর পিএস সবুর এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পরিচালক (বাজেট) ডা. বরুণ বিভিন্নভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। 

ঘটনাটি সম্পর্কে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন চেয়েছি। প্রতিবেদন পেলে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আজিজুলকে একটি চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে তা বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/269988/প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর-বাসার-লিফটে-পরিচালককে-মারধর-থানায়-হত্যাচেষ্টা-মামলা

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.